বিশেষ প্রতিবেদক : রামুতে সাত নারী উদ্যোক্তা পেয়েছেন, ‘উইমেন্স ট্যুরিজম লিডার্স অ্যাওয়ার্ড রামু ২০২৫’ সম্মাননা। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় রামু উপজেলা পরিষদের বাঁকখালী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে তাদের এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। পর্যটনের ভূদৃশ্য রূপান্তরে নারীর ক্ষমতায়নে আইএলও–আইজেক প্রকল্প ও এনরুট ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় কক্সবাজার মহিলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজনে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম। অতিথিরা সাত নারী উদ্যোক্তার হাতে সম্মাননা তুলে দেন। কক্সবাজারে পর্যটন খাতে নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ অবদানকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্যে 'উইমেন্স ট্যুরিজম লিডার্স অ্যাওয়ার্ড রামু ২০২৫' সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারের পর্যটন শুধু সমুদ্রসৈকত আর হোটেল নয়। এটি মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। পর্যটনের সুবিধা যেন তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছায়। সে জন্য নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সফল নারী উদ্যোক্তাদের সম্মাননা প্রাপ্ত কথাগুলো নতুন নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে।
কক্সবাজার মহিলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাহানারা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, রামু উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উম্মে সুরাইয়া আমিন, উপজেলা পল্লী জীবিকায়ন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন শরিফ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নওরিন আজম তামান্না, আইএলও'র কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিকুর রহমান।
আইএলও-আইএসইসি পর্যটন খাত বাস্তবায়ন অংশীদারিত্ব কর্মসূচির আওতায় অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, তানিশা বিনতে আলম ও ইনতিজাম উল ইসলাম।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উম্মে সুরাইয়া আমিন বলেন, “খাদ্য, হস্তশিল্প ও সেবাখাতে নারীরা অসাধারণ ভূমিকা রাখছেন। তারা পরিবার সামলিয়ে উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন এবং কক্সবাজারের পর্যটনকে আরও বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলছেন।”
কক্সবাজার উইমেন চেম্বার অব কমার্স-এর চেয়ারম্যান জাহানারা ইসলাম বলেন, “এই নারীরা আমাদের গর্ব। তারা প্রমাণ করেছেন যে সামান্য সুযোগ ও সহায়তা পেলে নারীরা পর্যটন খাতে সফল উদ্যোক্তা হয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।”
আইএলও-এর কনসালট্যান্ট মোহাঃ মুস্তাফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ নারীদের দৃশ্যমানতা বাড়ায় এবং তাদের কাজকে স্বীকৃতি দেয়। পর্যটন খাতে নারীর নেতৃত্ব শুধু কর্মসংস্থানই তৈরি করছে না, বরং টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করছে। আইএলও সবসময় এই ইতিবাচক পরিবর্তনের পাশে থাকবে।”
অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প বলেন, 'উইমেন্স ট্যুরিজম লিডার্স অ্যাওয়ার্ড রামু ২০২৫' সম্মাননা প্রাপ্ত আইরিন ক্লাসিক কিচেনের সামিনা আফরীন আইরিন, মুনা'স হেঁশেলের রেহেনা পারভিন মুনা, বেবি ফুড উদ্যোক্তা ফারিয়া আহমদ, 'ঘরোয়া স্বাদ বাই আফরিন সুমি'র প্রতিষ্ঠাতা আফরিন সুলতানা সুমি, কমিউনিটি লিডার রেখা বড়ুয়া, রওনক কুক আর্টের রওনক আরা খানম, টুপি কারুশিল্পী ছেনোয়ারা আকতার।
সামিনা আফরীন আইরিন, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তার কর্মোদ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আইরিন ক্লাসিক কিচেন। বাঙালি ঐতিহ্যবাহী খাবার ও বেকড পণ্যে বিশেষজ্ঞ তিনি। তার পণ্য জাতীয় মহিলা সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত। তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি সমাদৃত। তার কর্মোদ্যোগে বাঙালি ঐতিহ্যবাহী খাবার ও বেকড পণ্যের গুণগত মান, ঐতিহ্যের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সামিনা আফরীন আইরিন ও আইরিন ক্লাসিক কিচেন অনন্য মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
রেহেনা পারভিন মুনা, ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত মুনা'স হেঁশেল এর প্রতিষ্ঠাতা। নিজ কর্মদক্ষতায় আচার, পিঠাপুলি ও রান্নাকে কাজে লাগিয়ে তিনি আজ সফল নারী উদ্যোক্তা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা তার কাছে হার মেনেছে। তিনি পেয়েছেন ব্যবসায়িক সাফল্য এবং বিভাগীয় জয়িতার পুরস্কার।
ফারিয়া আহমদ, একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য বেবি ফুড, শুকনো ফল ও তেল উৎপাদন করেন। উৎপাদন ও প্যাকেজিং-এ নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন তিনি। ফারিয়া আহমদের কর্মোদ্যোগ কক্সবাজারের নারীদের ডিজিটাল উদ্যোক্তা হওয়ার অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আফরিন সুলতানা সুমি, ঘরোয়া স্বাদ বাই আফরিন সুমি-এর প্রতিষ্ঠাতা। পিঠা, পুলি ও শুঁটকির মাধ্যমে কক্সবাজারের পর্যটনকে সমৃদ্ধ করছেন। নারীদের রান্না ও ডিজিটাল দক্ষতায় প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান দিয়েছেন এবং পরিবার ও উদ্যোক্তা জীবনের সফলতা পেয়েছেন তিনি।
রেখা বড়ুয়া, একজন উদ্যোক্তা ও কমিউনিটি লিডার। নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা এবং নারীদের জীবিকা ও কর্মসংস্থানে সহায়তা করেছেন। তিনিও জেলা পর্যায়ে জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন।
রওনক আরা খান, রওনক কুক আর্ট এর প্রতিষ্ঠাতা। মেলা ও উৎসবে রাখাইন-বাঙালি খাবারের প্রচার করেছেন তিনি। একজন চিকিৎসক হয়েও নারীদের কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করে তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনিও জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন।
ছেনোয়ারা আকতার, একজন টুপি কারুশিল্পী। তিনি সফল উদ্যোক্তা হিসেবে কক্সবাজার পর্যটকদের জন্য সাংস্কৃতিক স্মৃতিচিহ্ন তৈরি করেন।
কক্সবাজার জেলার পর্যটন শিল্পের বিকাশে রামু উপজেলার নারীরা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। কেউ পরিচালনা করছেন ইকো-রিসোর্ট, কেউ হস্তশিল্প ও খাদ্যভিত্তিক ব্যবসা গড়ে তুলেছেন, আবার কেউ নেতৃত্ব দিচ্ছেন ট্যুর সার্ভিস, ওয়েলনেস সেন্টার কিংবা হসপিটালিটি খাতে। নারীদের এই অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া, সামনে আনা এবং অন্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার রোল মডেল তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে আইএলও-আইজেক প্রকল্প ও এনরুট ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় কক্সবাজার উইমেন চেম্বার অব কমার্স এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
সম্মাননা প্রাপ্ত নারীরা নিজেদের সংগ্রাম ও সফলতার গল্প শেয়ার করেন, যা উপস্থিত সকলকে অনুপ্রাণিত করে। অনুষ্ঠানটি নারী নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণকে আরও উৎসাহিত করার এক তাৎপর্যপূর্ণ আয়োজন হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে।
0 Comments