নিজস্ব প্রতিবেদক: মহেশখালীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী আওয়ামীলীগ নেতা একাধিক মামলার আসামি মাহমুদুল হককে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জানা যায়, মহেশখালীতে প্রশাসনের সহযোগিতায় আয়োজিত ফয়সাল আমিন ফুটবল টুর্নামেন্টে অতিথি পরিচয়ে উপস্থিত হয়ে পুলিশের পাশে বসে খেলা দেখেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ একাধিক মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মো. মাহমুদুল হক।
তাকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার না করায় সমালোচনা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিনি গোপনে এলাকা ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার বিমান বন্দরে গেলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে মহেশখালী পৌরসভার চরপাড়া মাঠে। টুর্নামেন্টে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন মহেশখালী থানার এসআই সালামত উল্লাহ। আয়োজকদের তালিকায় অতিথি হিসেবে নাম ছিল পৌর আওয়ামী লীগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক মামলার পলাতক আসামি মাহমুদুল হকের।
ফলে অতিথিদের নির্দিষ্ট মঞ্চে পুলিশ কর্মকর্তা ও আসামিকে পাশাপাশি বসে পুরো খেলা দেখতে দেখা যায়। এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ, আয়োজক ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, মাঠে উপস্থিত অনেকেই তাকে চিনলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা মামলা এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার মামলাসহ একাধিক মামলা চলমান। কিছু মামলায় তিনি পলাতক ও কিছুতে চার্জশিটভুক্ত আসামি হিসেবে আছেন।
এ বিষয়ে সাব-ইন্সপেক্টর সালামত উল্লাহ বলেন, “আমি সদ্য যোগদান করেছি। কে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তা চিনতাম না। কেউ পরিচয় করিয়েও দেয়নি। পরিচয় না জেনে তো তাকে গ্রেপ্তার করার প্রশ্নই আসে না।”
“ওয়ারেন্ট নেই”-থানার তদন্ত কর্মকর্তার দাবিঃ
গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) প্রতুল কুমার দাবি করেন, “মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ওয়ারেন্ট নেই। তিনি জুলাইয়ের ঘটনাতেও আসামি নন। তাই তাকে আটক করার সুযোগ নেই।”
কিন্তু বিকেলেই খবর আসে- মাহমুদুল হক মহেশখালী থেকে পালিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে যাচ্ছেন। বিষয়টি থানায় জানানো হলেও তদন্ত কর্মকর্তার সোজাসাপ্টা মন্তব্য-“ওয়ারেন্ট না থাকলে ধরবো কীভাবে।”
এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ বিমানবন্দর থেকে তাকে আটক করে।
কক্সবাজার সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ইলিয়াছ খান বলেন, “মহেশখালী থানার একটি মামলার আসামি হিসেবে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরও কোন মামলা রয়েছে কিনা তা যাচাই-বাছাই চলছে।”
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রহিম উল্লাহ বলেন, “কোনো ব্যক্তি ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হলে পুলিশ তাকে যেকোনো স্থান থেকেই তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করতে বাধ্য। ফৌজদারি কার্যবিধিতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।”
এদিকে ছুটিতে থাকা মহেশখালী থানার ওসি মঞ্জুরুল হক বলেন, “তার বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে।”
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হেদায়েত উল্লাহ বলেন, “এগুলো থানার বিষয়। কার নামে কী মামলা আছে-এই তথ্য থানার কাছেই থাকে। আমি উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলাম, কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। মাঠে একটি ঝামেলা হয়েছিল; দুই পক্ষ এলে সেটাই শুধু সমাধান করে দেওয়া হয়েছে।”।

0 Comments