উখিয়ার থাইংখালিতে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে পাহাড়খেকো রেজা সিন্ডিকেট: বিট কর্মকর্তার রহস্যজনক ভুমিকা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পর্ব-১: কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পালংখালি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এর তেলখোলা থাইংখালির রহমতেরবিল,গজুঘোনা, চোরাখোলা এলাকায় নির্বিচারে চলছে পাহাড়কাটার মহোৎসব। বিট অফিসের নাকের ডগায় প্রকাশ্য জনসম্মুখে দিনের পর দিন এসব স্থানের পাহাড় কেটে বনভুমিকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করলেও রহস্যজনক কারনে এসব পাহাড় খেকো চক্রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি থাইংখালী বিট কর্মকর্তা ..।

বরং তিনি উল্টো এসব পাহাড় ধ্বংসযজ্ঞকারীদের প্রশ্রয় দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। খোদ বিট কর্মকর্তার এমন আচরনে চরম ক্ষুব্দ হয়েছেন পরিবেশবাদী ও এলাকার সচেতন মহল। তারা বলছেন, খোদ পাহাড় রক্ষায় সরকারের নিযোজিত ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাহাড় ধ্বংসকারীদের সহযোগিতা করা কোন ভাবেই কাম্য নয়। তারা সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, বনভুমি রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হোক। অন্যথায় এলাকাবাসী এই দুর্নীতিবজের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি হাতে নেবে বলে হুশিয়ারি দেন তারা। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় বদিউল আলম প্রকাশ বদুর ছেলে রেজা ও  শফিউল আলমের ছেলে নুরুল আলম প্রকাশ (মনু), নুর আহাম্মদের ছেলে গুরা মিয়া,নুরু মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন ও রহমতেরবিলের রিদুয়ানের নেতৃত্বে চলছে নির্বিচারে পাহাড়কাটা। রবিবার ( ৯ নভেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার দৃশ্য। 

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এইসব পাহাড় কাঁটার পিছনে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে তার অন্যতম পাহাড় খেকো রেজা ও মনু দিনে দুপুরে বনবিভাগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাহাড়ী বনাঞ্চল ধ্বংস করে সমতল ভুমিতে পরিনত করেছেন। অবৈধ ড্রাম্প ট্রাক যোগে পাহাড়ী বনাঞ্চলের মাটি কেটে বিভিন্ন দোকান ভরাট,ঘর, জমি ও জলাশয় ভরাটসহ বিভিন্ন কাজে এই পাহাড়ি মাটি বেচা-বিক্রি করছে।এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে,বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ম্যানেজ করে তারা এসব অবৈধ কর্মকান্ড চালাচ্ছে। বিট কর্মকর্তার নিরবতাই এর অন্যতম প্রমান। 

স্থানীয়রা জানান, বিট কর্মকর্তার অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের কারণে সংরক্ষিত ওই এলাকায় অবাধে গাছপালা কাটায় জীববৈচিত্রের অভয়াশ্রম হুমকির মুখে পড়ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

স্থানীয়রা আরও জানান, তাদের এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাসরত মানুষের জরাজীর্ণ ঘর মেরামত কিংবা নতুন ঘর বা অস্থায়ী স্থাপনা করতে গেলেই বিট কর্মকর্তাকে দিতে হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে দিতে হয় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার উপর শুরু হয় এ্যাকশন। শুধু তাই নয় এই বিটের অধীনে অনেক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীও পাহাড় কেটে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে যাচ্ছে। যেহেতু উখিয়া একটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এলাকা। 

বিট কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে এলাকার দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে নিয়মিত ঘুষ আদায় করে আসছেন। এছাড়াও বন-বিভাগের উটলড বাগান রয়েছে তাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে টাকার বিনিময়ে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে মুখ খোলাও বারন। স্থানীয়রা আরো জানায়, বনভূমির পাদদেশে খতিয়ানভূক্ত জমিতে বাড়ি ঘর করতে চাইলে নানা অজুহাতে জমির মালিকদের কাছ থেকে বিট কর্মকর্তা আরাফাত উৎকোচ দাবী করেন বলে একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ রয়েছে। এদিকে বিট কর্মকর্তার অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ চলে যায় তার উর্ধতন এক কর্মকর্তার পকেটে। তাদের সহযোগিতায় বিট কর্মকর্তা সকল প্রকার অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। 

এ বিষয় নিয়ে পরিবেশ আন্দোলন( বাপার) উখিয়া উপজেলার সভাপতি সাংবাদিক আয়াছ রবি জানান, যারা পাহাড়ি মাটি বিক্রি করে নামে-বেনামে সম্পদ বানিয়েছেন, তাদের সেই সম্পদ ক্রোক করে পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিবেশ বান্ধব কাজে ব্যবহার করা হউক। পাহাড় কাটায় সহযোগিতাকারী বন কর্তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তা আরাফাত মাহমুদের মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উখিয়াতে যেহেতু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বসবাস করে যাচ্ছে তাই এই এলাকায় বনবিভাগের জায়গা রক্ষা করতে খুব কঠিন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দলের প্রভাব খাটিয়ে দিনদিন পাহাড় কেটে যাচ্ছে, ফলে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তিনি বলেন, এই পর্যন্ত আমি যোগদান করার পর থেকে ৮ টি মামলা দিয়েছি এবং কয়েকটি বনের জায়গায় স্থাপনা হয়েছিল এগুলো ভেঙে দিয়েছি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। 

এবিষয়ে জানতে রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের মুঠোফোনে একধিকার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। 

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মনিরুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজারে বনভূমির পরিমাণের বিপরীতে লোকবল কম। কিন্তু বনকে অবৈধভাবে ক্ষতবিক্ষত ও ভোগ করার লোকজন বেশি। দখলবাজ ও ক্ষমতাবানরা একীভূত হয়ে পাহাড় ও বন ধ্বংস করায় অনেক সময় অনেককিছু বনকর্মীদের অগোচরে থাকে। তবে যখনই কোনো পাহাড় কর্তন ও বনে পাকা দালান গড়ার তথ্য আসে, তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হয়। 

তিনি বলেন, উখিয়ার থাইংখালি বিটের বনভূমিতে কারা কারা পাহাড় কাটার সাথে জড়িত খোঁজ খবর নিয়ে দেখতেছি। কেউ যদি পাহাড় কাটার সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


Post a Comment

0 Comments