উখিয়ায় সাংবাদিকের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি: থানায় এজাহার দায়ের

উখিয়া প্রতিনিধি: কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী পশ্চিম পাড়ায় এক তারেকুল রহমান নামে স্থানীয় সাংবাদিকের নিকট পাঁচ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার একদল চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। 

চাঁদা না দেয়ায় প্রাণনাশের হুমকি ও ভাড়াবাসা ভাঙচুরেরও ঘটনা ঘটেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকালে এ ঘটনা ঘটে।  

ভুক্তভোগী সাংবাদিক তারেকুল রহমান জানান, পালংখালী ইউনিয়নের নাম্বার ওয়ান ইয়াবা কারবারি ফরিদ। এটা ওপেন সিক্রেট। তার ইয়াবা সাম্রাজ্যের কথা পালংখালী, উখিয়া ছাড়াও পুরো কক্সবাজার বাসী জানে। তারেকুল বলেন, সম্প্রতি ফরিদ মায়ানমার থেকে ইয়াবার চালান পাচার করে এনে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে; এমন সংবাদ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল থেকে প্রকাশিত হলে সেটি সাংবাদিক তারেকুল রহমানকে দায়ী করে ইয়াবা কারবারি ফরিদ ও তার সিন্ডিকেটের ক্যাডার বাহিনী। 

এতে তারা ক্ষীপ্ত হয়ে সাংবাদিক তারেকুল রহমানের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সাংবাদিক তারেকুল।  

ভুক্তভোগী সাংবাদিক তারেকুল রহমান আরও জানান, তার মালিকানাধীন টিনশেড দোকানঘর ও ভাড়াবাসার সামনে এসে অভিযুক্তরা গত তিন মাস ধরে নানা অজুহাতে চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাকে এর আগেও বারবার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। 

গত ২৮ জুন বিকেল ৫টার দিকে অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলে, চাঁদার টাকা না দিলে তাকে এলাকাছাড়া করা হবে, তার সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হবে এবং রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে। 

তারই ধারাবাহিকতায়, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে অভিযুক্ত ফরিদুল আলম (৪২), সোনা মিয়া (৪৪), নাজমুল (৩২), মনির (৩৫) ও আরও ২-৩ জন অজ্ঞাত সহযোগী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভুক্তভোগীর বাড়ির সামনে এসে আবারও চাঁদা দাবি করে। তার স্ত্রীসহ প্রতিবাদ করলে অভিযুক্তরা দোকান ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় এবং প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। 

অভিযোগ রয়েছে, দূর্ধর্ষ এই ইয়াবা কারবারি ফরিদকে বিভিন্ন সময় শেল্টার ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন এপিবিএন পুলিশের এসআই সাজ্জাদ ও তার অফিনের কম্পিউটার অপারেটর জানে আলম রাজু, ক্যান্টিনের দায়িত্ব পালন করা একজন কনেস্টেবল। মুলত: এই তিনজনের সহযোগিতায় ক্যাম্প এলাকায় ফরিদের ইয়াবার চালান নির্বিঘ্নে ঢুকাতে সকল প্রকার সহযোগিতা করেন। এমনকি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে সাংবাদিকদের সংবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের সিক্রেট তথ্যও ফরিদের কাছে পৌঁছে দেয় তারা। 

এ বিষয়ে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী নুরুল আলম বলেন, আমি ঘটনার সময় পাশে ছিলাম। দেখি একদল লোক হঠাৎ করেই তারেকুল রহমানের বাড়ির সামনে এসে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। তারা খুব রাগান্বিত ছিল এবং হাতে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র ছিল। তারা খোলাখুলিভাবে চাঁদার টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছিল। তার স্ত্রী প্রতিবাদ করলে তারা দোকান ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি আমরা এলাকাবাসী আগে কখনো দেখিনি। আমরা সবাই খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এভাবে যদি একজন সাংবাদিককেই নিরাপত্তা না দেওয়া যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হবে। 

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, ঘটনাটি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হয়েছে এবং দেরিতে হলেও থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এখন তিনি নিজ ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। 

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ বিষয়ে জানান, অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Post a Comment

0 Comments