মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রোডের স্পীড বোট মালিকদের মাঝে লাইফ জ্যাকেট বিতরণ

সুমন চন্দ্র দে, মহেশখালী: মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিবছর মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-পারাপারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গাম বোট ও স্পিডবোট মালিকদের মাঝে লাইফ জ্যাকেট বিতরণ করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য যাত্রীদের প্রাণ রক্ষা করা এবং প্রান রক্ষার্থে প্রাথমিক প্রস্তুতি। অথচ বাস্তবে এগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয় না বলে মনে করছেন মহেশখালী উপজেলার সচেতন জনসাধারণ। 

মহেশখালী–কক্সবাজার নৌপথে অতীতে একাধিক ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বহু নারী, পুরুষ ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এমনকি নৌপথে এক্সিডেন্ট হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে হয়েছে অনেকেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দুর্ঘটনার আগে-পরে কার্যকর কোনো তদারকি সচরাচর দেখা যায় না, দুর্ঘটনা ঘটার পরেই কেবল প্রশাসনের টনক নড়ে।

বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন হাজারো যাত্রীকে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে যাতায়াত করতে হয়। অথচ অধিকাংশ স্পিডবোটেই লাইফ জ্যাকেট রাখা হয় না। যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে বিতরণকৃত লাইফ জ্যাকেটগুলো কোথায় যায়, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যায় জনমনে।

১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) সকালে আইওএম (ওঙগ) এনজিওর পক্ষ থেকে মহেশখালীর স্পিডবোট মালিকদের মাঝে ৬৫০টি লাইফ জ্যাকেট ও ২৮০টি লাইফ বয়া বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নিয়মিত লাইফ জ্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। তবুও ব্যবহার না হওয়ায় যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।

আইওএম এনজিও কর্তৃক মহেশখালীর জনসাধারণ/যাত্রী নৌ-পারাপারে নিরাপত্তার লক্ষ্যে  বিতরণ কার্যক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ হেদায়েত উল্যাহ্, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, মহেশখালী। এসময় উপস্থিত ছিলেন জনাব কাউসার আহমেদ, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার, মহেশখালী ও স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি/সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচেতন ব্যক্তি জানান, প্রতিবছর বিতরণ করা শত শত লাইফ জ্যাকেট আসলে কোথায় যায়? কেন এগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি থাকে না? বোট (নৌকা) মালিকরা যদি ব্যবহারই না করেন, তাহলে কোটি টাকার এই প্রকল্পে ব্যয় করে লাভটাই বা কী?

বড় মহেশখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা নূরুল হক বলেন,  যে সমস্যা গুলো প্রশাসনের তদারকি করা দরকার, তা হলো:- বোটে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন নিয়মিত দেখা যায়, যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে বোঝাই করা হয়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়। স্পিডবোটের অযত্ন-অবহেলা অনেক বোট পুরনো ও অচলাবস্থার কাছাকাছি থেকেও নৌপথে চলছে। 

সেগুলোর মেরামত ও নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষার তদারকি নেই। যাত্রা শুরুর সময় কোনো নিরাপত্তা নির্দেশনা নেই যাত্রীদের বোঝানো হয় না কীভাবে লাইফ জ্যাকেট পরতে হয় বা দুর্ঘটনার সময় কী করতে হবে।

সচেতন মহল মনে করেন, প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, নিয়মিত ফিটনেস পরীক্ষা, চালকের প্রশিক্ষণ এবং যাত্রীদের সচেতনতা ছাড়া মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তা কখনোই নিশ্চিত হবে না। কেবল লাইফ জ্যাকেট বিতরণ নয়—এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।


Post a Comment

0 Comments