সচেতনতা ও আইনি প্রয়োগেই সম্ভব কক্সবাজারকে বাল্যবিবাহ মুক্ত করা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাল্যবিবাহ রোধ ও ঝুঁকিতে থাকা শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ লক্ষে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে কক্সবাজার শহরে তারকা মানের হোটেল সীগার্ল এর সম্মেলন কক্ষে সোমবার দিনব্যাপী জেলা পর্যায়ের সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা,সাংবাদিক ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে চলে মতবিনিময় সভা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, বিশেষ অতিথি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াছমিন,বিশেষ অতিথি কক্সবাজার সিভিল সার্জেন ডা: মোহাম্মাদুল হক, সভাপতিত্ব করেন রোনাল্ড প্রবীর চিসিক সিনিয়র ম্যানেজার কক্সবাজার।

শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দোলন জোসেফ গোমেজ ডাইরেক্টর হিউমেনিটেরেইন ইমারজেন্সি এফেয়ার্স এন্ড ক্লামেইট চেঞ্জ এডপটেশান, স্বপন সিং প্রজেক্ট ম্যানেজার। সঞ্চালনা করেন ছোটন বড়ুয়া উপজেলা কর্ডিনেটর, চাইল সেফটি নেট প্রজেক্ট।

সভায় ওয়াল্ডভিশনের কর্মকর্তা বাল্যবিবাহ রোধে শিশু সুরক্ষা প্রকল্পের প্রাথমিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মোহাম্মদ মাহাবুব ইসলাম ভুঁইয়া, লীড কনসালচেন্ট ফর বাসিলিং স্টাডি সেন্টার ফর কোয়ালিটেটিভ রিচার্জ ঢাকা। প্রতিবেদনে কক্সবাজার জেলার শিশুদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ ও শিক্ষার ক্ষেত্রে বিদ্যমান চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, সচেতনতা এবং অভিভাবকদের অংশগ্রহণ না থাকায় বাল্যবিবাহ এখনও একটি বড় সমস্যা

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, বাল্যবিবাহ শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, এটি একটি জাতীয় দুর্যোগ। কন্যাশিশুরা যেন প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসনকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। জেলা প্রশাসন শিশু সুরক্ষায় ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের মেয়েরা যেন শিক্ষা,স্বাস্থ্য ও নিরাপদ কৈশোর পায় এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। বাল্যবিবাহ তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়। তাদের বিশেষ করে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার সামাজিক সচেতনতা।

বিশেষ অতিথি কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফার ইয়াছমিন বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে কন্যাশিশুকে বোঝা নয়, সম্পদ হিসেবে দেখতে হবে। তাই বাল্যবিবাহ রোধে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা এবং কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে বক্তরা বলেন, বাল্যবিবাহ একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র শিশুকে সুরক্ষা দেওয়া নয়, বরং তাদের জন্য এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে তারা স্বপ্ন দেখতে পারে, নিরাপদে বেড়ে উঠতে পারে এবং শিক্ষা ও আত্মমর্যাদায় নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। এই প্রচেষ্টায় আমরা একা নই সরকার, জনপ্রতিনিধি, সমাজ এবং প্রত্যেকটি পরিবারের সম্মিলিত ভূমিকা থাকলেই সম্ভব হবে একটি বাল্যবিবাহ মুক্ত সমাজ গড়া।

অনুষ্ঠানে সভাপতি বলেন, বাল্যবিবাহ কন্যাশিশুর অধিকার হরণের একটি নির্মম উপায়। এটি বন্ধে আমাদের আইনি পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়তে হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ইতিমধ্যেই কয়েকটি ইউনিয়নকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছি। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারলেই বাল্যবিবাহ কমবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি অভিভাবককে সচেতন হতে হবে।

পরে মত বিনিময় পর্বে উপস্থিত বিভিন্ন জন্য প্রশ্নের উত্তর দেন ওয়াল্ডভিশনের মোহাম্মদ মাহাবুব ইসলাম ভুঁইয়া।

এসময় সভায় উপস্থিত ছিলেন,ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার পার্থ প্রতিম বাগচী, মবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম অফিসার লিমা মেরী রোজারিও, মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার লুইজা মন্ডল, জয়শ্রী পিউরী ফিকেশন এ্যাডভোকেসি কোর্ডিনেটর প্রমুখ।


Post a Comment

0 Comments