নিজস্ব প্রতিবেদক: কিছু স্বপ্নের নাম বয়স নয়। কিছু সাহসিকতার নাম বয়সের সীমা মানে না। আর সেইসব সাহসী স্বপ্নবাজদের একত্রিত করেছিল ইমপ্যাক্ট প্লাস কিশোর ক্লাব, দিনব্যাপী কক্সবাজার শহরের ইউনি রিসোর্টের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টানমালা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় ‘রোল মডেল স্বীকৃতি’ প্রদান করা হয়। সেইসাথে সবার মাঝে প্রতিশ্রুতি ও প্রতিবাদের ভাষা তৈরি হয়েছে, যেখানে বক্তারা বারবার উচ্চারণ করেছেন, "বাল্যবিবাহ নয়, চাই বিকল্প স্বপ্নের চর্চা।"
সোমবার (২১ জুলাই) আয়োজিত এ কর্মশালায় অংশ নেয় কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার ১০০ জন কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ। উপস্থাপনা করেন ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার লুইজা মন্ডল। অনুষ্ঠানে কিশোর-কিশোরীদের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, পরিবেশ রক্ষা, সহপাঠীদের মধ্যে ইতিবাচক নেতৃত্ব গড়ে তোলা এবং সামাজিক সচেতনতা তৈরি করার কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে চৌফলদন্ডী ইউনিয়নকে ‘বাল্যবিবাহ মুক্ত এলাকা’ ঘোষণার লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে চাইল্ড সেইফটি নেট প্রজেক্ট ওয়ার্ল্ড ভিশনের কক্সবাজার প্রজেক্ট ম্যানেজার স্বপন সিং বলেন, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নাম এখন কেবল আইন নয়, এটি একটি মানসিক বিপ্লব। এই বিপ্লবের নাম ইমপ্যাক্ট প্লাস কিশোর ক্লাব। আর এর সৈনিকেরা বয়সে কিশোর, কিন্তু দায়িত্বে পরিপক্ব। এই ক্লাব আসলে একটি প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি একটি চেতনার জাগরণ। যেখানে কিশোররা শুধু ‘না’ বলতে শেখে না, তারা বোঝায় কেন ‘না’ বলাটা জরুরি। তারা শেখে কীভাবে তথ্য দিয়ে সমাজকে বোঝাতে হয়, কেমন করে সহানুভূতি আর যুক্তির মাধ্যমে অন্যদের বদলানো যায়।
তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি, এই বিপ্লব একদিন শুধু চৌফলদন্ডী নয়, পুরো বাংলাদেশকে বদলে দেবে। ইমপ্যাক্ট প্লাস কিশোর ক্লাবের নাম একদিন ইতিহাসে লেখা হবে একটি প্রজন্ম কীভাবে নীরব সমাজকে জাগিয়ে তুলেছিল, সেই প্রমাণ হিসেবে। আজ এই কিশোর সৈনিকদের আমি শুধু অভিনন্দন জানাই না, আমি তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছি।
মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার লুইজা মন্ডল বলেন, শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে হলে আমাদের আগে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমি গর্বিত, আজ আমি এমন এক সম্মেলনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতা নেই, নেই কোনো হঠাৎ করতালি আছে জীবনের জন্য লড়াই করা একেকটা কিশোরকিশোরীর চোখের দীপ্তি।
তিনি বলেন, এই ক্লাবের সদস্যরা সমাজের নীরব প্রহরীর মতো। এরা পাড়া-মহল্লায়, স্কুলে, পরিবারে চোখ-কান খোলা রাখে। কেউ বাল্যবিবাহের খবর পেলে চুপ করে না, বরং প্রতিবাদ করে, তথ্য দেয়, সহায়তা চায়। এদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি ‘না’ একেকটা পরিবারের ভবিষ্যৎ বদলে দেয়।
বক্তরা বলেন, ইমপ্যাক্ট প্লাস শুধু একটি প্রজেক্ট নয়, বরং এটি শিশু ও কিশোরদের নেতৃত্বে সমাজ বদলের একটি আন্দোলন হয়ে উঠছে। এই অনুষ্ঠান তারই জীবন্ত প্রমাণ যেখানে আগামী দিনের নেতৃত্ব আজই নিজের পরিচয় তৈরি করছে সাহস, মনন ও মানবিকতার মাধ্যমে।তরণদের কণ্ঠ যদি সাহসিকতার সঙ্গে সামনে আসে, তাহলে বাল্যবিবাহ শুধু ঠেকানো নয়, সমাজ বদলানোও সম্ভব। “বাল্যবিবাহ শুধু মেয়েদের ক্ষতি করে না, ছেলেরাও একটানা মানসিক ও আর্থিক চাপে পড়ে যায়। এই অসুস্থ প্রথা আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার পার্থ প্রতিম বাগচী, ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার লিমা মেরী রোজারিও, সাংবাদিক জাবেদ আবেদীন শাহীন, ইমপ্যাক্ট প্লাস কিশোর ক্লাব এর ১০০জন সদস্যবৃন্দ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন ক্লাব থেকে নির্বাচিত রোল মডেলদের জীবনকথা ও তাদের উদ্যোগ নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়, যা উপস্থিত সকলের মধ্যে গভীর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে।
0 Comments