উখিয়ায় সন্তান হত্যার দায়ে ঘাতক পিতা কারাগারে

হেলাল উদ্দিন , উখিয়া থেকে:  কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মনখালী গ্রামে মাদকাসক্ত পিতার হাতে সন্তান হত্যার দায়ে ঘাতক পিতাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

জানাযায়, নিজেরই ৪ বছরের আদরের কন্যা সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এক পাষণ্ড পিতা। ঘটনাটি এলাকায় চরম আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মা'জননীর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস, থমকে গেছে পুরো গ্রাম।  

শনিবার (৫ জুলাই ২০২৫) রাত আনুমানিক সাড়ে ৮টার দিকে জালিয়া পালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কোনারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুর নাম কানিজ ফাতেমা, বয়স মাত্র চার বছর। হাঁটতে শিখে সদ্য দৌড়ানো শিখছিল, মুখে সদা হাসি—“আব্বু” বলে ছুটে যাওয়া সেই মেয়েটি আজ নিথর, রক্তাক্ত মরদেহ হয়ে পড়ে ছিল ঘরের মেঝেতে।  

শিশুটির মা' কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রাতের খাবার তৈরি হচ্ছিল। আমি সামান্য সময়ের জন্য পাশের বাড়িতে গিয়েছিলাম একটা কাজে। ফিরে এসে দেখি—বাচ্চারা আতঙ্ক ও ভশে কাঁপছে। বড় ছেলে বললো, ‘আব্বু রড নিয়ে সবাইকে মারতে আসছে’। দৌড়ে ঘরে ঢুকে দেখি—আমার ছোট্ট কানিজ পড়ে আছে ছাগলের পাশে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে বের হই, তখনি সে মেয়ের নিথর দেহটা তুলে ঘরের পাশের খালে ফেলে দিয়ে এসে খাটের নিচে শুয়ে পড়ে—যেন কিছুই হয়নি!  

মা জোসনার বর্ণনায় উঠে আসে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ট্রাজেডির দৃশ্য। তিনি বলেন, অনেকদিন ধরে সে (আমান উল্লাহ) নেশাগ্রস্ত। এর আগেও খুন করে জেল খেটেছে। ওর জন্য সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতাম, ধারালো অস্ত্র লুকিয়ে রাখতাম। কিন্তু এভাবে নিজের বুকের মানিকটাকেই হারাবো—স্বপ্নেও ভাবিনি।  

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানাযায় রাতে হঠাৎ করে আমান উল্লাহ মাদকাসক্ত অবস্থায় বাড়ির লোকজনকে রড নিয়ে ধাওয়া করে। আতঙ্কে সবাই পালিয়ে যায়। এ সুযোগে সে ঘরের মধ্যে থাকা শিশু কন্যা কানিজকে লক্ষ্য করে আঘাত করে এবং মেয়েটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ইনানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) দুর্জয় সরকার। তাঁর নেতৃত্বে পুলিশ কানিজ ফাতেমার মরদেহ উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। ঘাতক পিতা আমান উল্লাহ (৩২)-কে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।   

ঘটনাটি জানাজানি হতেই পুরো গ্রামে নেমে আসে শোক ও ঘৃণার ছায়া। কান্নায় ভেঙে পড়েন নারী-পুরুষ সকলেই। প্রতিবেশী হালিমা খাতুন বলেন, এই মানুষটা আগে থেকেই ভয়ঙ্কর ছিল। কিন্তু এমনটা করবে, কে জানতো? ওর মাদক নেওয়া নিয়ে অনেকবার বোঝানো হয়েছিল।  এ প্রসঙ্গে উপ-পরিদর্শক দুর্জয় সরকার বলেন, ঘটনার পরপরই আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। 

প্রাথমিক তদন্তে শিশুটিকে হত্যা করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি আরও জানান, ঘাতক পিতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং মাদকাসক্তি ও পূর্ব ইতিহাস যাচাই করে অভিযোগপত্র তৈরি করা হবে।  এই ভয়ংকর ঘটনার পর সামাজিকভাবে শিশুদের নিরাপত্তা এবং পরিবারে মাদকসেবীর উপস্থিতি নিয়ে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজকর্মীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, একজন বাবা কীভাবে এতটা পাষণ্ড হতে পারে? প্রশাসনের উচিত এমন অপরাধীদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।  চার বছরের ফুটফুটে শিশুটি আজ মাটির নিচে। 

“আব্বু” ডাকটি আর কখনো শোনা যাবে না। একজন মায়ের বুক খালি হয়ে গেছে, ভাইবোনরা হারিয়েছে তাদের আদরের ছোট বোনকে, আর সমাজ পেয়েছে এক নতুন জিজ্ঞাসা— আর কত শিশুকে এমন হিংস্রতার শিকার হতে হবে।

Post a Comment

0 Comments