রোহিঙ্গা ইস্যু ‘নিরাপত্তার’ হুমকি হতে পারে: জাতিসংঘে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আপন ডেস্ক: রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান না হলে এটি শুধু মানবিক নয়, বরং দ্রুতই একটি ভয়াবহ আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকটে পরিণত হতে পারে- এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।  

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে “আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর দারিদ্র্য, উন্নয়নঘাটতি ও সংঘাতের প্রভাব” শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।  

তিনি বলেন, “গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে সংকটটি এখন আর কেবল মানবিক নয়; এটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং ক্রমবর্ধমানভাবে একটি নিরাপত্তা ইস্যুতে রূপ নিয়েছে।”  মিয়ানমারে ভয়াবহ নিপীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পূর্ণ নিরাপত্তা ও অধিকারের সঙ্গে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।  

আলোচনায় তিনি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক জুলাই বিপ্লব— সবক্ষেত্রেই তরুণরা অন্যায় ও অসাম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে।”  

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি তরুণদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকে, তারা সহজেই চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। আর দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য ও বৈষম্য একসময় সহিংসতা ও অস্থিরতায় পরিণত হয়।”  

বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপটে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবিত তিনটি শূন্যনীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে থাকবে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ। শান্তি ও উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে একসূত্রে যুক্ত করলেই কেবল এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।”   পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং নবগঠিত পিস বিল্ডিং কমিশনের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর আহ্বান জানান, যাতে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। 

তিনি বলেন, “নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূস প্রবর্তিত ‘সামাজিক ব্যবসা’ মডেল দারিদ্র্য বিমোচন ও সংঘাত প্রতিরোধে একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”  বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরে তিনি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।  এই উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় বাংলাদেশ ছাড়াও সুইডেন, উরুগুয়ে, পূর্ব তিমুর, জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

Post a Comment

0 Comments