জুলফিকার আলী ভুট্টো, চকরিয়াঃ কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চাঁদাবাজির সময় মোহাম্মদ কাকন (২৭) নামের এক প্রতারককে হাতেনাতে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঢেমুশিয়া ইউপি কার্যাালয় থেকে তাকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃত কানন উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড কুতুবদিয়া পাড়ার জাকারিয়ার ছেলে। বহুদিন ধরে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আলোচনায় থাকা কানন কখনো নিজেকে সাংবাদিক, কখনো আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবি করে এলাকায় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ রাব্বি ঈশান বলেন, পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কানন নামের এক যুবককে চাঁদাবাজির সময় আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ আবু তাহের মানিক বাদী হয়ে থানায় এজাহার দায়ের করছে।
আবু তাহের মানিক বলেন, 'মঙ্গলবার দুপুরে কানন নিজেকে সমন্বয়ক দাবি করে পরিষদের নারী উদ্যোক্তা আসমাউল হুসনার কক্ষে প্রবেশ করে বলেন = “এখানে জনসাধারণের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে, আমি সাংবাদিক আমাকে ৫ হাজার টাকা দিন, নয় তো নিউজ করে দিব”। এভাবে উক্ত নারী উদ্যোক্তাকে চাকরিচ্যুতি ও মানহানিকর অপপ্রচারের ভয় দেখানো হয়। তিনি গ্রাম পুলিশ, দফাদার ও অন্যান্যদেরকে বিষয়টি জানালে অভিযুক্ত কানন তখন তাদের প্রতিও অশ্লীল আচরণ ও হুমকি প্রদান করেন এবং সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেন।
তার কথাবার্তা উপস্থিত সেবা প্রার্থীদের সন্দেহ হলে, সাথে সাথে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সাইরাস চৌধুরী বলেন, একজন ভুয়া সমন্বয়ক কে আটকের খবর শুনে সেখানে গিয়ে দেখি আটক কানন পার্শ্ববর্তী কোনাখালী এলাকার ছেলে। বিগত ৫ আগস্টের পূর্বে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে যুক্ত থেকে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করতো। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিচয়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকে। কানন নিজেকে কখনো সমন্বয়ক, কখলো সাংবাদিক ও ছাত্রদের সংগঠন এনসিপি-এর ‘ক্রাইম রিপোর্টার’ পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করত বলে অভিযোগ রয়েছে।'
সাইরাস চৌধুরী আরও জানান, আটককৃত কানন এলাকায় "ভাই ভাই সুপার পাওয়ার" নামে একটা কিশোর গ্যাং সংগঠন গড়ে তোলে, সে ওই সংগঠনের একজন উপদেষ্টা বলে জানিয়েছেন এলাকার ভুক্তভোগীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৪ জুন দুপুর ১২:৩০ টার দিকে চকরিয়ার ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদে চাঁদাবাজির চেষ্টা চালালে স্থানীয় জনগণ সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী কাননকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।'
কোনাখালী এলাকার ভুক্তভোগী ডা. আব্দুল হামিদ বলেন, 'এই কানন নামের ছেলেটা এতটাই বেপরোয়া যে, মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায় হচ্ছে তার পেশা ও নেশা। তার দাবি করা চাঁদা না দেওয়ায় কিছুদিন আগে চকরিয়া আদালত চত্বরে আমার স্ত্রীকেও ফেসবুক লাইভে এসে সে অপদস্ত করেছিল। এমন কথা সে লাইভে বলেছে যা চরম পর্যায়ের অশোভন।'
এদিকে এনসিপির চকরিয়া উপজেলা ছাত্র প্রতিনিধি সায়েদ হাসান তার ফেসবুকে ঘোষণা দেন 'এনসিপিতে চকরিয়া উপজেলায় মোঃ কানন নামের কোন সমন্বয়ক বা ক্রাইম রিপোর্টার বলে কেউ নেই। কেউ এ পরিচয় দিয়ে থাকলে সে ভুয়া।' তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।
চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার অভিজিৎ দাশ বলেন, তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, চাঁদাবাজি, সরকারি কাজে বাঁধা ও নারীকে হেনস্তা করার অপরাধে মামলা রুজু পূর্বক আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
0 Comments