বাল্যবিবাহ মানেই শিশু নির্যাতন,ঝুঁকিপূর্ণ জীবন

জাবেদ আবেদীন শাহীন: কক্সবাজার সদর উপজেলার সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও ক্ষতিকর দিক’ শীর্ষক রাউন্ড টেবিল ডায়লগ মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফার ইয়াছমিন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ওয়ার্ল্ড ভিশনের বিভিন্ন চাইল্ড ফোরামের সদস্যবৃন্ধ, জেলা পর্যায়ের সুশীল সমাজ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা,সাংবাদিক ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে চলে মতবিনিময় সভা।

শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জয়শ্রী পিউরী ফিকেশন এ্যাডভোকেসি কোর্ডিনেটর, উপস্থাপনায় ছিলেন ওয়ার্ল্ড ভিশন মোবিলাইজেশন এন্ড সিস্টেম স্ট্রেন্থেনিং অফিসার পার্থ প্রতিম বাগচী, এসময় তিনি বাল্যবিবাহ রোধ ও ক্ষতির দিক গুলো প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

প্রধান অতিথি কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফার ইয়াছমিন বলেন, বাল্যবিবাহ কেবল একটি সামাজিক ব্যাধিই নয়, এটি শিশুদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস করে। বাল্য বিবাহ অকাল মাতৃত্বের ঝুঁকি তৈরি করে এবং শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। ওয়ার্ল্ড ভিশন চৌফলদন্ডি ইউনিয়ন বাল্য বিবাহ মুক্ত এলাকা ঘোষণা হিসাবে দীর্ঘ দুই বছর ধরে কাজ করছে। হয়ত খুব শ্রীঘ্রই আমরা এর সুফল পাবো। এলাকার মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এলাকায় কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, বৃত্তি কার্যক্রম চালু রাখা এবং জীবন দক্ষতা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এখন বাল্যবিবাহ রোধে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা এবং কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। 

বিশেষ অতিথি জেলা মহিলা বিষয়ক উপপরিচালক সুব্রত বিশ্বাস বলেন, বাল্যবিবাহ শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো সমাজকে ধ্বংস করে। তাই নেতিবাচক সামাজিক রীতিনীতি নির্মূল করতে হলে কেবল আইন নয়, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষত্রে পরিবারের অভিভাবকদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণই এই প্রচেষ্টাকে সফল করতে পারে। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার সামাজিক সচেতনতা।

সভায় বক্তরা বলেন, বাল্যবিবাহ একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয় সঠিকভাবে প্রয়োগ ও কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। অনেক দরিদ্র পরিবার মনে করে, মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিলে একদিকে তারা খাদ্যের বোঝা থেকে মুক্তি পাবে, অন্যদিকে মেয়ের বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু বিয়ের বছর ঘুরতে সেই সংসারে নেমে আসে অমাবস্যার অন্ধকার অশান্তি। তাছাড়া ইসলাম কখনো জোরপূর্বক বা অপরিপক্ব বয়সে বিয়েকে সমর্থন করে না। ধর্মের নামে বাল্যবিবাহ বৈধ নয় পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও জোর দেন বক্তারা। 

অনুষ্ঠানে সভাপতি চৌফলদন্ডির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম বলেন, ওয়ার্ল্ড ভিশনের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই চৌফলদন্ডি  ইউনিয়নকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিত ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারলেই বাল্যবিবাহ অনেক কমবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি অভিভাবককে সচেতন হতে হবে।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা মত দেন, সরকারের পাশাপাশি সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে এসে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হলে তা হলেই বাল্যবিবাহের মতো ভয়াবহ সমস্যা রোধ করা যাবে।এই প্রচেষ্টায় সরকার, জনপ্রতিনিধি, সমাজ এবং প্রত্যেকটি পরিবারের সম্মিলিত ভূমিকা থাকলেই সম্ভব হবে একটি বাল্যবিবাহ মুক্ত সমাজ গড়া।


Post a Comment

0 Comments