মোহাম্মদ সেলিম ॥
⏹ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে বাড়ি নির্মাণ
⏹গোপনে নিয়ন্ত্রন করা হয় মাদক বাণিজ্য-সন্ত্রাসী কর্মকান্ড
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নিয়ম বহির্ভুতভাবে দোতলা ও পাকা বাড়ি নির্মাণ করে সন্ত্রাসীদের আস্তানা বানিয়েছে “হালিম গ্রুপ” নামে একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এসব বাড়িতে বসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চাালালেও নজরে আসেনি ক্যাম্প ভিত্তিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। ফলে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিজেদের আত্মরক্ষার ঢাল হিবেবে এরকম টেকসই স্থাপনা নির্মান করে গোপনে আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উখিয়ার বালুখালীস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ৮-(ই) এর ব্লক বি-৬০ এলাকায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ধীরে ধীরে দোতলা বাড়ি নির্মান করে হালিম গ্রুপের গোপন আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন আবুল কাশিম। এই বাড়িতে বসেই হালিম গ্রুপের প্রধান হালিমের হয়ে তার যাবতীয় মাদক বাণিজ্য ও অস্ত্র চোলাচালানের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন করেন আবুল কাশিম। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে তার অপর ভাই আবুল ফয়েজ। এই দুই ইয়বা সম্রাট একই এলাকার নাজির হোসেনের পুত্র।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এই দোতলা বাড়ির উপর থেকেই প্রশাসনের লোকজনের গতিবিধি পর্যবেক্ষন করা হয়। তার জন্য রয়েছে অন্তত দুই ডজন সশস্ত্র রোহিঙ্গা যুবক। নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়ক থেকে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রবেশের রাস্তায় প্রতি ৫০ গজ দুরত্বে বসানো হয়েছে এক একজন পাহারা। তারা সাধারন রোহিঙ্গার বেশে পাহারা দেয়ায় তাদেরকে চেনার কোন উপায় থাকেনা। সন্দেহজনক কেউ ক্যাম্পের সড়কে প্রবেশ করলেই সেই তথ্য তাৎক্ষনিক হালিম গ্রুপের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। যার ফলে অনেকটা নির্বিঘ্নে ক্যাম্পে বসেই হালিম গ্রুপের সদস্যরা সারাদেশে ইয়াবা ও অস্ত্র চোরা চালান কর্মকান্ড পরিচালিত করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ক্যাম্প এলাকায় রোহিঙ্গাদের থাকার ঘর নির্মান করা হয় আরআরআরসি এর নির্দেশনা অনুযায়ী এবং সুনির্দষ্ট ডিজাইন ও প্ল্যান অনুযায়ী। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জের অনুমতি ছাড়া এর বাইরে আর কোন বাড়তি কাজ করার কোন সুযোগ নেই রোহিঙ্গাদের। অথচ ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার পরেও কিভাবে এসব পাকা ও দোতলা বাড়ি তৈরী করে সন্ত্রাসীদের আস্তানা বানানো হয়েছে তা স্থানীয় সাধারন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।
বিশিষ্টজনরা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গাদের নিজ উদ্যোগে পাকা বাড়ি বা দোতলা বাড়ি তৈরি করার কোন সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জ বা এপিবিএন পুলিশের অগোচরে কিভাবে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে দোতলা বাড়ি নির্মান করলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাছাড়াও এসব ক্যাম্পের বসতবাড়িকে আবার সন্ত্রাসী বাহিনীর আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এসব কর্মকান্ড দেশদ্রোহিতার শামিল। এর দায় সংশ্লিষ্টরা এড়াতে পারেন না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ (ইস্ট) এর ক্যাম্প ইনচার্জ গাজী শরিফুল হোসাইন আপনকন্ঠকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত ছিলেন না। ক্যাম্প ৮ ইস্ট এ সম্প্রতি তিনি যোগদান করেছেন। তবে সরেজমিন পরিদর্শন করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ক্যাম্প ৮-ইস্ট এর দায়িত্ব প্রাপ্ত এপিবিএন এর এএসপি জহিরুল ইসলাম বলেন, “হালিম বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। হালিম গ্রুপের সদস্যদের তালিকা আমাদের হাতে এসেছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না। এসব অপরাধীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে অচিরেই এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্থানীয় রোহিঙ্গারা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ক্যাম্প-৭, ৫, ১৪, ও ৮(ইস্ট)সহ বেশ কয়েকটি ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে ‘হালিম গ্রুপ’। মুলত: ক্যাম্প ৮-ইস্ট এলাকায় গ্রুপ প্রধান হালিমের অপকর্মের মূল হোতা হিসেবে কাজ করেন হেড মাঝি আইয়ুব খান ও নুরুল ্আমিন। অভিযোগ রয়েছে, হালিম গ্রুপের নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে হেড মাঝি আইয়ুব খান ও নুরুল ্আমিন প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব পালন করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্প ৮(ইস্ট) এর একজন বাসিন্দা আপন কন্ঠকে বলেন, সম্প্রতি ক্যাম্প এলাকায় নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে “হালিম বাহিনী”। তার যাবতীয় অপকর্মের মুল হোতা হেড মাঝি আইয়ুব খান ও নুরুল ্আমিন। তাদের ইশারা ও পরিকল্পনায় বিভিন্ন ক্যাম্প এলাকায় ইয়াবা সরবরাহ ও অস্ত্র বেচা-কেনার কাজ চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, ক্যাম্প-৮(ইস্ট) এর আবুল কাশিমের দোতলা বাড়িটিকেই দীর্ঘদিন ধরে আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন হালিম গ্রুপের প্রধান আব্দুল হালিম।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ক্যাম্প ৮(ইস্ট) এর হেড মাঝি আইয়ুব খানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ করেন নি।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো এখন সন্ত্রাসীদের অভয়ারন্যে পরিনত হয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে যে যার মত অস্ত্র সংগ্রহ করছে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
0 Comments