সুমন চন্দ্র দে, মহেশখালী: কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যার জেরে জাপানি ঋণ সহায়তা স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা (JICA) এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) চিঠি পাঠিয়েছে।
জাইকা ৪ জুনের মধ্যে সাতটি প্রশ্নের উত্তর চেয়ে ইআরডিকে চিঠি দিয়েছে। সময়মতো জবাব না মিললে ঋণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংস্থাটি। চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকল্পে কী ঘটেছে তা জানার আইনগত অধিকার জাইকার রয়েছে।
জানা গেছে, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জাপানের সহায়তায় ২০১৩ সালে প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার, যার মধ্যে জাইকা দিচ্ছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা—এটি এখন পর্যন্ত জাপানের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঋণ সহায়তা।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য নির্মিত ৪৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের ব্যয় ধরা হয় ১,০২৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭৯১ কোটি টাকা অর্থায়ন করছে জাইকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতায় ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হলেও, দুর্নীতির অভিযোগে প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের মামলায় বলা হয়, জাহাঙ্গীর আলম ২৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন এবং ৯৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ১২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
জাইকা একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট সংযুক্ত করে বাংলাদেশের ইআরডিকে পাঠানো চিঠিতে সাতটি প্রশ্ন তোলে, যার মধ্যে রয়েছে—জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না, তিনি প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন কতদিন, দুর্নীতির সম্পদের সঙ্গে প্রকল্পের সম্পৃক্ততা, মানি লন্ডারিংয়ের বিষয় এবং মামলার অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য।
এ বিষয়ে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব (জাপান শাখা) মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘আমরা জাইকার চিঠির জবাব প্রস্তুত করছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জবাব দিতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জবাবের ভিত্তিতে জাইকা প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত বড় একটি আন্তর্জাতিক প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে জাইকার সিদ্ধান্ত।
0 Comments