চকরিয়ার বদরখালীতে নদী ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন প্রভাবশালী সিন্ডিকেট..!


আলাউদ্দিন আলো:
 

চকরিয়া উপজেলার বদরখালী-উজানটিয়া চ্যানেলের করিয়ারডিয়া ঘাটঘর সংলগ্ন নদীটি দখল করে বহুতল স্থাপনা তৈরি করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ভুমি খেকো সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন দুপুরে এই দখল যজ্ঞ চালালেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিরবতায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, চকরিয়ার বদরখালী ১নং ওয়ার্ড, উত্তর নতুনঘোনা পাড়া বদরখালী-কোনাখালী কানেক্টিং সড়ক সংলগ্ন জোয়ার ভাটার নদী ভরাট করে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ করছেন মাহাবুব গংরা। সরজমিন পরিদর্শন করে করিয়ারডিয়া ঘাটঘরের ইজারাদার মাহাবুবুর আলম এই ঘটনার সাথে জড়িত এমন তথ্য জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এই বিষয়ে মাহাবুব আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন কে ম্যানেজ করে এই স্থাপনা নির্মাণ করছি। তিনি এমন ভাবে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নিয়ে ও ক্রয় করে তার জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করছেন। 

তিনি আরো বলেন, আমার জায়গায় আমি দোকান ঘর নির্মাণ করছি, সাংবাদিকদের সাথে এভাবেই দম্ভের সাথে কথাগুলো জানান দখলবাজ মাহাবুব আলম। লিজ নেয়ার বা ক্রয় করা বৈধ কোন কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, “অবশ্যই বৈধ কাগজপত্র আছে  এবং আমার যেখানে দেখানো প্রয়োজন সেখানেই দেখাব। আপনারা কে.? আপনাদের কেন আমি কাগজ দেখাব..? হুঙ্কারের সুরে এই কথা গুলো বলেন মাহাবুব আলম। 

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রবীণ মুরুব্বি বলেন এই নদী পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন জীবিকার একমাত্র মাধ্যম, এটি রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার তা না করে এগুলো লিজ দিচ্ছে, যার কারনে মানুষ দিন দিন নদী ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ করতে সাহস পাচ্ছে। 


এই বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) চকরিয়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন আলো বলেন, এটি দ্রুত অপসারণ করা হোক, এই নদী মাতামুহুরি নদী চকরিয়া উপজেলা, মহেশখালী চ্যানেল-বদরখালী, উজানটিয়া, পেকুয়া উপজেলাসহ পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এই নদী। এই নদী দিয়ে সাদা সোনা খ্যাত লবণ চিংড়ি মাছ গাছ-বাঁশসহ যাবতীয় মালামাল পরিবহনের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। বিগত ১৫-১৬ বছরে নদীর একতৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে বহু স্থাপনা নির্মাণ করায় নদীর নাব্যতা সংকট, দখল, দূর্ষন ইত্যাদি দেখা দেয় এবং বড় বড় ট্রলার গুলো চলাচল করতে জোয়ারের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকতে হয়। এটি ভরাট ও দখল না হলে দ্রুত এই অঞ্চলের যে কোন মালামাল পৌছানো সম্ভব, দিন দিন নদী খেকোদের দখলের কারনে এটি সরু খালে পরিনত হয়ে যায়। এভাবে অবৈধ দখল অব্যাহত থাকলে একদিন কুহেলিয়া নদীর মত এটিও হারিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হয়ত এই নদীও আমাদের থেকে হারিয়ে যাবে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন আমরা সরজমিন গিয়ে পরিদর্শন করে এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতম দায়িত্বশীলদের অবগত করব। ইতিমধ্যে চকরিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান এর হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও ও ছবিসহ অবগত করেছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা। 

স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও কবি সাইফুল মোস্তফা বলেন, আমরা দ্রুত এই বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুর রহমান কে স্মারক লিপি প্রদান করব। যেন এই স্থাপনা ও দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।  


Post a Comment

0 Comments