🔴# ভুমি সংক্রান্ত নানা জালিয়াতির ঘটনায় দুদক, ডিবি, সিআইিডি, পিবিআইসহ জেলার বিভিন্ন থানায় তহসিলদার সলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে অন্তত ডজন মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।
🔴# বারবার অপরাধীকে বাঁচাতে প্রশাসনের রহস্যজনক ভুমিকায় পেশাদারিত্ব নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
আন্ত:জেলা ভুমি জালিয়াত চক্রের মূল হোতা রামু উপজেলার ধেচুয়া পালং ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) ও জালিয়াতি-দূনীতির অন্তত ডজন মামলার আসামী সলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশের জের ধরে কক্সবাজারে সাংবাদিকের বসত বাড়িতে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সাড়ে চার মাসেও আদালতে চার্জশীট দাখিল না করে উল্টো চার্জশীট থেকে হামলাকারী তহসীলদার সলিম উল্লাকে রক্ষার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যপারে কক্সবাজার পুলিশ সুপারসহ, পুলিশের ডিআইজি ও আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক মোহাম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করায় তার বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে আহত করা হয়েছে। ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করা হয়েছে, চাঁদা না দিলে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “পরিবার পরিজন নিয়ে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে দিনের পর দিন গুম-খুনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী তহসিলদার সলিম উল্লাহ। অথচ এই পরিস্থিতিতেও পুলিশের একজন দায়িত্বশীল উর্ধতন কর্মকর্তা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কিভাবে একজন অপরাধীর পক্ষে রিপোর্ট দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে বাধ্য করার নির্দেশ দিতে পারে তা বাংলাদেশের কোন আইনে আছে কি-না তা আমার জানা নেই।” একজন পুলিশ কর্মকর্তার নৈতিক অধ:পতন সভ্য সমাজ কোন ভাবেই মেনে নেবে না। ন্যায় বিচার পাওয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে আইজিপি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক।
সাংবাদিক সেলিম বর্তমানে দৈনিক আপন কন্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল- গ্রীন টিভির স্টাফ রিপোর্টার এবং কক্সবাজার জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা যায়, আন্ত:জেলা ভুমি জালিয়াত চক্রের মূল হোতা রামু উপজেলার ধেচুয়া পালং ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) সলিম উল্লাহর নানা জালিয়াতি-দূনীতির বিরুদ্ধে কক্সবাজারের প্রাচীন জনপ্রিয় ‘দৈনিক আপন কন্ঠ’ পত্রিকায় ধারাবাহিক অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হলে বিগত ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর সকালে কলাতলী বিজয়নগরস্থ দৈনিক আপন কন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক মোহাম্মদ সেলিমের বসত বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায় এবং ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে তহসিলদার সলিম উল্লাহ ও তার বাহিনী। চাঁদা না দিলে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকিও দেয়া হয়। এসময় সাংবাদিক সেলিম গুরুতর আহত হয়।
বসতবাড়িতে হামলার ঘটনায় ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং আহত সাংবাদিক সেলিম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেন এবং একই দিন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস মামলাটি এন্ট্রি না করে নানা অযুহাতে কাল ক্ষেপন করতে থাকলে ৪ দিন পর ১২ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী সাংবাদিক সেলিম আদালতের শরনাপন্ন হন। আদালত সাংবাদিক সেলিমের অভিযোগ আমলে নিয়ে টিট ফর এ্যাফাইয়ার হিসেবে মামলাটি নথিভুক্ত করতে সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পরে সদর থানা পুলিশ এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেন। যার মামলা নং=৪২(১২)২৪।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলাটি দায়েরের পর প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে নানা ছল চাতুরির মাধ্যমে হামলাকারী সলিম উল্লাহ ও তার বাহিনীদেরকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে খোদ পুলিশের কয়েকজন পদস্থ কর্মকর্তা। হামলার ঘটনায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্য প্রমান থাকলেও চার্জশীটের পরিবর্তে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে আসামীদের পক্ষে ফাইনাল রিপোর্ট দিতে চাপ প্রয়োগ করেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস্ শাকিল আহমেদ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সদ্য বদলীকৃত পুলিশ কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ সাংবাদিকের বসতবাড়িতে হামলার আসামীদের বাঁচাতে ০৫ লক্ষ টাকা ঘুস নেন আসামী সলিম উল্লাহর কাছ থেকে। আর এই ঘুস নিয়েই শাকিল তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন সরকারী কর্মচারীর (হামলাকারী)পক্ষে রিপোর্ট দিতে। “হামলাকারী হলেও সরকারী কর্মচারীর পক্ষেই রিপোর্ট দিতে হবে” শাকিল আহমেদ এর এমন নির্দেশের কথা উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে স্বীকার করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই জাকির।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই জাকির ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশের বাইরে আমার যাওয়ার সুযোগ নেই। এসময় বাদীকে এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে নারাজি দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এন্ড অপস্ শাকিল আহমেদ এর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এই অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো: সাইফ উদ্দীন শাহীন এর সাথে স্থানীয় কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিকরা সাক্ষাতে আলাপ করলে তিনি তাৎক্ষনিক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাকিরকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে জাকির তা স্বীকার করে বলেন, “সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দেওয়া যাবে না বলেছেন- শাকিল স্যার।” জাকিরের এমন কথা শুনে পুলিশ সুপার বলেন “আমার আমলে এসব চলবে না”। এসময় পেশাদারিত্ব বজায় রেখে প্রকৃত ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে জাকিরকে নির্দেশ দেন তিনি।
অনুসন্ধানে ও একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারে আমলে কক্সবাজারের জনৈক ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা (তহসিলদার) সলিম উল্লাহ তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালী সচিব হেলাল উদ্দিনের প্রভাব খাটিয়ে জেলা জুড়ে শক্তিশালী জালিয়াত সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। সলিম উল্লাহর নেতৃত্বে উক্ত চক্রটি বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কক্সবাজারের পর্যটন স্পট মেরিনড্রাইভসহ বিভিন্ন এলাকার জমিতে ভুয়া, জাল খতিয়ান সৃজন করে নানা প্রতারনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। ভয়াবহ জালিয়াতির মাধ্যমে একজনের জমি অন্যের নামে জাল দলীল ও খতিয়ান সৃজন করে দিয়ে অল্পদিনেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া এই সলিম উল্লাহ কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়িসহ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
তহসিলদার সলিম উল্লাহ এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, তার অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তাকে মিথ্যা মামলা, হামলা, হত্যা, গুম-খুনের হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি-নির্যাতন চালানো হয়। শুধু তাই নয়, পতিত সকোরের আমলে মানতেন না ইউএনও, এসিল্যান্ড, ডিসিকেও। তৎকালীন সরকারের ক্ষমতাধর সচিব হেলাল উদ্দিনের ক্ষমতা ব্যবহার করে বদলী হতেন নিজের পছন্দের ভুমি অফিসে। নিয়মিত অফিস না করা, নিজের নিয়োগকৃত উম্মেদারদের দিয়ে অফিস চালানো, ঘুসের রেট নির্ধারন করে ইচ্ছে মত ঘুস আদায়সহ প্রকাশ্যে নানা অপকর্ম চালালেও কোন প্রকার শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে সাহস করতেন না ডিসি এডিসরাও।
শুধু তাই নয়, তার আলাদীনের আশ্চর্য্য প্রদীপের ইশারা এতোটাই শক্তিশালী যে, তার এসব জাল-জালিয়াতি ও অপকর্মে নি:স্ব অসংখ্য ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট ইউএনও, এসিল্যান্ড ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও রহস্যজনক কারনে তারা কোন ব্যবস্থা নেননা। বরং অভিযোগ করার অপরাধে উল্টো খোদ অভিযোগকারীকেই নানাভাবে হয়রানি করেন জেলা প্রশাসনের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।
ভুমি সংক্রান্ত নানা জালিয়াতির ঘটনায় দুদক, ডিবি, সিআইিডি, পিবিআইসহ জেলার বিভিন্ন থানায় তহসিলদার সলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে অন্তত ডজন মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। সচিবসহ প্রশাসনের শক্তিধর হাই প্রোফাইল দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রভাব খাটিয়ে নানা দেন-দরবার-তদবিরের মাধ্যমে এসব তদন্ত কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে তহসিলদার সলিম উল্লাহ ও তার চক্রটি।
0 Comments