বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান: প্রথম দিনে গুড়িয়ে দেয়া হল ২০০ স্থাপনা

আপন কন্ঠ রিপোর্ট: কক্সবাজার শহরের প্রাণকেন্দ্র বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকা থেকে টানা ৬ ঘণ্টার অভিযানে ২০০টির মতো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই অভিযান চলে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক (বন্দর) নয়ন শীল বলেন, ‘বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রথম দিনের অভিযানে নদীর কস্তুরাঘাট অংশ থেকে প্রায় ২০০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ একর জায়গায় নির্মিত শতাধিক পাকা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৪ দিনের অভিযানে আরও দুই হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। আমরা নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দিতে চাই।’

বিআইডব্লিউটিএ ছাড়াও অভিযানে অংশ নেন জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সদস্যরা। পৃথক অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, গত ২৪ আগস্ট বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে চার মাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

গত ৩০ আগস্ট কক্সবাজার সফরে এসে নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।

এর আগে গত ২৪ এপ্রিল দুই উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ও সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান সরেজমিনে বাঁকখালী নদীর পরিদর্শন করে দখল দূষণের অবস্থা দেখে হতাশা ব্যক্ত করেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, হাইকোর্টের আদেশমতে বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করা হচ্ছে। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হবে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি খননযন্ত্র দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কস্তুরাঘাট এলাকার নির্মিত শতাধিক পাকা ও আধা পাকা ঘরবাড়ি। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে অনেক বাসিন্দাকে ঘরবাড়ি থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলতে দেখা গেছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিছুদিন পর উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে আবার নির্মিত হয় ছয় শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে শত শত একর জলাভূমি ঘিরে রেখেছেন।

বিআইডব্লিউটিএর দেওয়া তথ্যমতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাঁকখালী নদী তীরের ৭২১ একর জমিকে নদীবন্দর ঘোষণা করে সরকার। ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দিতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দখল-দূষণে সেই কাজ হয়ে ওঠেনি।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, ২০২২ সালের ১৫ জুন ৩৬ জন অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তারও আগে অন্তত ৭০ দখলদারের বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা করা হয়। কিন্তু দুজন ছাড়া কোনো আসামি ধরা পড়েননি।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে এখন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি দখলদারদের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি হচ্ছে। এরপর মামলা করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, নদীর সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিশেষ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। গত তিন দশকে সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে যৌথ অভিযান আর হয়নি।


Post a Comment

0 Comments