ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানীর শিকার দুই নারীকে ১০ ঘন্টা থানায় আটকে রেখে ধর্ষণ চেষ্টাকারীর সাথে আপোষ করালেন চকরিয়া থানার ওসি!!

লোকমান ইসলাম রানা: ধর্ষণের চেষ্টা ও শ্লীলতাহানীর শিকার দুই নারীকে ১০ ঘন্টা থানায় আটকে রেখে  ধর্ষকের সাথে আপোষ করালেন চকরিয়া থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। গত ২৬ জুন  চকরিয়া থানা ভবনে  চাঞ্চল্যকর এঘটনাটি ঘটেছে।

সূত্র জানায়, কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার ভাড়া বাসায় ঢুকে দুই নারীর শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করার এক দিন পর ধর্ষণ চেষ্টাকারী থানায় উল্টো কাউন্টার মামলা করেছেন ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় দুই নারীকে থানায় ডেকে নিয়ে আটক করে রাখেন চকরিয়া থানা-পুলিশ। পরবর্তীতে থানায় ১০ ঘণ্টা আটকে রেখে ধর্ষকের সঙ্গে আপোষ করতে বাধ্য করেন ওসি।

জানা গেছে, ধর্ষণ চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে ২৩ জুন চকরিয়ায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী এক নারী (২৭)। মামলায় তিনি শাহরিয়ার রোস্তম মানিক নামের এক যুবককে একমাত্র আসামি করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে কক্সবাজার ডিবি পুলিশের ওসিকে নির্দেশ দেন।

অন্যদিকে আদালতে মামলা করার এক দিন পর ২৫ জুন অভিযুক্ত শাহরিয়ার রোস্তম মানিক বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চকরিয়া থানায় পাল্টা মামলা দায়ের করেন।

 এদিকে শ্লীলতাহানির মামলার বাদী প্রতিবেদক'কে বলেন,আমি আদালতে মামলা করার কারণে পরের আমাদের বিরুদ্ধে  চকরিয়া থানা কোনো রকম তদন্ত ছাড়া মামলা নিয়েছে।

ওই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, একটি ভাড়া বাসায় তিনি (বাদী) এবং আরেক নারী ও তার শিশুসন্তান থাকেন। ৮ জুন রাত ৮টার দিকে ওই বাসায় এসে অপর নারীর স্বামী বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়েছেন জানিয়ে দরজা খুলতে বলেন আসামি শাহরিয়ার রোস্তম মানিক। দরজা খোলার পর মানিক বাসায় ঢুকে ওই নারীকে কুপ্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে ওই নারীর শ্লীলতাহানির সময় চিৎকার দিলে বাদী এগিয়ে গিয়ে অভিযুক্ত মানিককে ঝাপটে ধরেন। তখন তাকেও গলা চেপে ধরেন মানিক। এসময় মানিক উক্ত নারীর হাতের আঙুল কামড়ে মাংস ছিড়ে নিলে বাদী নিজেকে আত্মরক্ষার্থে মানিককে ছেড়ে দেয়।  এই সুযোগে মানিক ধরা পড়ার ভয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে দরজার বাহিরের দিকের ছিটকিনি লাগিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার পরদিন আসামি ফোন করে মামলা না করার জন্য হুমকি দেন বলে জানান ধর্ষণ চেষ্টার শিকার দুই নারী।

এদিকে আদালতে মামলার এক দিন পর দুই নারীকে আসামি করে থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন খোদ ধর্ষণ চেষ্টার আসামী শাহরিয়ার রোস্তম মানিক। এতে ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়। পরে তাদের দুজনকে থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে আটক করেন চকরিয়া থানা পুলিশ।

মামলার বাদী প্রতিবেদক'কে বলেন, তারা চকরিয়া থানায় অভিযোগ করতে গেলে মানিক ও তার কয়েক সহযোগী তাকে মামলা না করে আপসের হুমকি দেন। পরদিন দুপুরে চকরিয়া থানায় এজাহার জমা দিলে তা মামলা হিসেবে নেওয়া হয়নি। পরে ২৩ জুন আদালতে মামলার আবেদন করলে বিচারক তা আমলে নিয়ে কক্সবাজার ডিবিকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু কোনো রকম তদন্ত ছাড়া উল্টো থানার পুলিশ স্ব-উদ্যোগে তাদের আসামি করে মামলা নেয়।

বাদী জানান, ২৬ জুন বিকেল ৪টার দিকে হঠাৎ চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শফিুকল ইসলাম রাজা তাঁদের ওসির কথা বলে থানায় ডেকে নিয়ে যান। থানায় যাওয়ার পর তাঁরা জানতে পারেন, তাঁদের নামে মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদেরকে প্রায় ১০ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয়। এরপর আমরা আদালতে মামলার কথা জানাই ও কাগজ দেখাই। ওই দিন রাত ৯টায় ওসির সঙ্গে দেখা করি। বিষয়টি খুলে বলি। আমার মামলার কথা জানার পর থানার ওসি, এসআই সবাই কীভাবে আমাদের আদালতে পাঠাবেন, তা নিয়ে টেনশনে পড়ে যান। এরপর রাতে সমঝোতার চেষ্টা করেন। পরে জোরপূর্বক আমাদের কাছ থেকে নন-জুডিশিয়াল একটি স্ট্যাম্পে সই নেন। এবং রাত সোয়া ২টার দিকে আমাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

স্ট্যাম্পে ৬০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ উল্লেখ আছে জানিয়ে বাদী আরও জানান, ওই নারীর আড়াই বছরের সন্তান থাকায়, ভয়ে কৌশলে থানা থেকে বের হতে স্ট্যাম্পে সই করেছেন তিনি। সেখানে একজন অ্যাডভোকেটও ছিলেন। ভুক্তভোগী নারী আরও বলেন, বিশ্বস্ত সূত্রে তিনি জানতে পেরেছেন, ২ লাখ টাকার বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘একই ঘটনা, একই সময়, একই স্থান; অথচ তাদের (ভিকটিমদের) মামলা নেয়নি থানা পুলিশ, কিন্তু অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অপরাধীর পক্ষ নিয়ে মামলা নিয়েছে।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত শাহরিয়ার রোস্তম মানিক ব্যস্ততা দেখিয়ে সরাসরি কথা বলবেন জানিয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে  চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম প্রতিবেদক'কে  বলেন, মামলা নেওয়ার আগে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়ছে, কিন্তু ওইদিন আসামি বাড়ি তালাবদ্ধ করে কোথাও চলে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষ মামলা উঠিয়ে নেবে এবং ক্ষতিপূরণ দেবে বলে আপস হয়েছে। সেখানে একজন আইনজীবীও ছিলেন।

চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বলেন, আসামি ধরার পর পুলিশ কীভাবে আপস করে, এটা বোধগম্য নয়। তবে আদালত ছাড়া থানায় আপস করার সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইমলাম বলেন, দুইপক্ষ আপস হয়ে গেছে। দুইপক্ষ তাঁদের করা মামলা তুলে নেবে মর্মে আপস করেছে। এরপর আসামিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।


Post a Comment

0 Comments